• ঢাকা
  • |
  • শনিবার ১০ই কার্তিক ১৪৩২ দুপুর ০২:৩১:১১ (25-Oct-2025)
  • - ৩৩° সে:
  • উপমহাদেশের খবর :
সংবাদ ছবি

ইউক্রেন ইস্যুতে রাশিয়ার জ্বালানি খাতের বিরুদ্ধে নতুন পদক্ষেপ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: রাশিয়ার তেল ও গ্যাসকে বিশ্ববাজার থেকে সরিয়ে দিতে ইউক্রেনের পক্ষে থাকা ২০টিরও বেশি দেশ অঙ্গীকার করেছে। এই পদক্ষেপের মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের যুদ্ধযন্ত্রে অর্থের প্রবাহ বন্ধ করার চেষ্টা চলছে।লন্ডনে আয়োজিত ‘কোয়ালিশন অব দ্য উইলিং’ সম্মেলনের পর যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার বলেন, ‘আমরা রাশিয়ার যুদ্ধযন্ত্রের অর্থায়ন রুদ্ধ করছি।’ খবর বিবিসির।সম্প্রতি যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার দুই বৃহত্তম তেল কোম্পানির ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, আর ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) লক্ষ্যবস্তু করেছে রাশিয়ার তরল প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) রপ্তানি।লন্ডনে উপস্থিত ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, ‘রাশিয়ার ওপর চাপই যুদ্ধ থামানোর একমাত্র পথ।’ তবে সম্মেলনে ইউক্রেনের জন্য কোনো দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহের ঘোষণা দেওয়া হয়নি।জেলেনস্কি দীর্ঘদিন ধরে যুক্তি দিয়ে আসছেন যে, মার্কিন তৈরি টমাহক ও ইউরোপীয় ক্ষেপণাস্ত্র রাশিয়ার অভ্যন্তরে সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে (যেমন তেল শোধনাগার ও অস্ত্রাগার) আঘাত করতে পারলে যুদ্ধের খরচ মস্কোর জন্য বেড়ে যাবে।তবে গত সপ্তাহে ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জেলেনস্কিকে জানান, তিনি এখনই টমাহক সরবরাহে রাজি নন।২৩ অক্টোবর বৃহস্পতিবার পুতিন সতর্ক করে বলেন, ‘যদি এই ধরনের অস্ত্র রুশ ভূখণ্ডে হামলার জন্য ব্যবহার করা হয়, তবে প্রতিক্রিয়া হবে ধ্বংসাত্মক।’২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রার আগ্রাসন শুরু করে।লন্ডন সম্মেলনের পর এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে কিয়ার স্টারমার বলেন, ‘পুতিন শান্তির ব্যাপারে আন্তরিক নন।’ তাই ইউক্রেনের মিত্ররা বছরের বাকি সময়ের জন্য একটি ‘পরিষ্কার পরিকল্পনা’ নিয়েছে।স্টারমার জানান, রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় সম্পদের ওপরও লক্ষ্য স্থির করা হয়েছে, যাতে তা ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা অর্থায়নে ব্যবহার করা যায়। তবে তিনি বিস্তারিত জানাননি।এদিকে বৃহস্পতিবার ইইউ নেতারা ইউক্রেনের আগামী দুই বছরের আর্থিক সহায়তা অব্যাহত রাখার বিষয়ে সম্মত হয়েছেন, তবে রাশিয়ার হিমায়িত ১৪০ বিলিয়ন ইউরোর সম্পদ ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেননি।ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রী মেটে ফ্রেডরিকসন আশা প্রকাশ করেছেন, বড়দিনের আগেই ইউক্রেনের জন্য ‘ক্ষতিপূরণ ঋণ’ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।সম্মেলনে অংশ নেওয়া দেশগুলো ইউক্রেনের বিমান প্রতিরক্ষা জোরদারেরও প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, কারণ রাশিয়া প্রায় প্রতিদিনই ইউক্রেনের বেসামরিক এলাকা ও জ্বালানি অবকাঠামোতে হামলা চালাচ্ছে।জেলেনস্কি সতর্ক করে বলেন, ‘রাশিয়া শীতের যন্ত্রণাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে চায়—তারা আমাদের ভাঙতে চায়।’যদিও সম্মেলনে অনেক আশাব্যঞ্জক কথা বলা হয়েছে, কিন্তু বাস্তবিক পদক্ষেপ কীভাবে যুদ্ধক্ষেত্রে পরিবর্তন আনবে বা পুতিনকে আলোচনায় আনতে বাধ্য করবে—তা নিয়ে স্পষ্ট পরিকল্পনা জানানো হয়নি।ইউক্রেনে অনেক মানুষ এখন দৈনন্দিন জীবনের সংকটে বেশি ব্যস্ত। ওডেসার ইয়ানা কোলোমিয়েতস জানান, শহরে বিদ্যুৎ, পানি ও গরমের ঘাটতি দেখা দিয়েছে।তিনি বলেন, ‘আরও ভয়ঙ্কর বিষয় হলো, রাশিয়া এখন আমাদের অঞ্চলে গাইডেড বোমা নিক্ষেপ শুরু করেছে।’কিয়েভের তেতিয়ানা ডানকেভিচ বলেন, বিদ্যুৎ ও পানির সংকটে জীবন ‘খুব কঠিন’ হয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয় না এই যুদ্ধ খুব শিগগির শেষ হবে’।লন্ডন সম্মেলনে ইউক্রেনের জ্বালানি অবকাঠামো পুনর্গঠনের বিষয়েও আলোচনা হয়েছে, যদিও কোনো নির্দিষ্ট পদক্ষেপ ঘোষণা করা হয়নি।সম্মেলনে ডাচ প্রধানমন্ত্রী ডিক স্কুফ ও ন্যাটো মহাসচিব মার্ক রুটে উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ভিডিও বার্তার মাধ্যমে যোগ দেন।ইউক্রেন ও পশ্চিমা মিত্ররা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রস্তাবিত যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনায় সম্মত হয়েছে—যেখানে যুদ্ধক্ষেত্রের বর্তমান অবস্থান ধরে আলোচনার আহ্বান জানানো হয়েছে।তবে রাশিয়া এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে এবং কিয়েভ ও তার মিত্রদের কাছে এটি কার্যত আত্মসমর্পণের দাবি বলেই মনে হচ্ছে।এর আগে ২৪ অক্টোবর শুক্রবার জেলেনস্কি উইন্ডসরে রাজা চার্লসের সঙ্গে বৈঠক করেন। এটি ছিল তাদের চলতি বছরের তৃতীয় সাক্ষাৎ।