আন্তর্জাতিক ডেস্ক: চীন ও দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলোর সংগঠন আসিয়ান তাদের মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি আরও জোরদার করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক যুদ্ধের মধ্যেই দুই অঞ্চলের বাণিজ্য ক্রমবর্ধমান থাকায় চুক্তিটি আরও উন্নত করা হয়েছে।
২৮ অক্টোবর মঙ্গলবার মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে অনুষ্ঠিত ৪৭তম আসিয়ান সম্মেলনের ফাঁকে এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন চীনের প্রধানমন্ত্রী লি চিয়াং এবং মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম। খবর আল জাজিরার।


চুক্তির ‘৩.০ সংস্করণ’ অবকাঠামো উন্নয়ন, ডিজিটাল ও সবুজ পরিবর্তন, বাণিজ্য সহজীকরণ এবং জনগণের মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধির মতো ক্ষেত্রগুলোতে সহযোগিতা আরও বাড়াবে বলে জানিয়েছে চীনের রাষ্ট্র পরিষদ। ২০১০ সালে চালু হওয়া প্রথম মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির ওপর ভিত্তি করেই এই নতুন সংস্করণ গড়ে উঠেছে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীন ও আসিয়ান একে অপরের বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদারে পরিণত হয়েছে। ট্রাম্পের ২০১৮ সালের শুল্ক যুদ্ধের পর ‘চায়না প্লাস ওয়ান’ সরবরাহ চেইনের উদ্ভব এই প্রবৃদ্ধিকে আরও ত্বরান্বিত করেছে।
২০২৫ সালের প্রথম নয় মাসে চীন ও আসিয়ানের মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭৮৫ বিলিয়ন ডলারে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৯ দশমিক ৬ শতাংশ বেশি। এই বাণিজ্যের বড় অংশই শিল্প সরবরাহ চেইনের পণ্য। তবে ক্রমশ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ভোক্তাদের জন্য চীনা প্রস্তুত পণ্যও বাড়ছে।
সম্মেলনে বক্তব্যে লি চিয়াং বলেন, ‘চীন ও আসিয়ানের বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও গভীর হচ্ছে। নতুন চুক্তির মাধ্যমে আমরা আরও বিস্তৃত ও মানসম্মত অর্থনৈতিক সহযোগিতা আশা করছি।’
হংকং বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন্যান্স অধ্যাপক ঝিউ চেন আল জাজিরাকে বলেন, ‘এই চুক্তি চীনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের সঙ্গে বাণিজ্য উত্তেজনা বাড়ছে, তাই চীন আসিয়ান দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক মজবুত করতে চায়। এটি দুই পক্ষের জন্যই লাভজনক চুক্তি।’
লি চিয়াং ট্রাম্পের শুল্কনীতিরও সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, ‘একতরফা নীতি ও সুরক্ষাবাদী মনোভাব বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক শৃঙ্খলাকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করছে। বহিরাগত শক্তিগুলো আমাদের অঞ্চলে ক্রমবর্ধমান হস্তক্ষেপ করছে এবং অনেক দেশ অন্যায্যভাবে উচ্চ শুল্কের শিকার হচ্ছে।’
ট্রাম্পও রোববারের আসিয়ান সম্মেলনে অংশ নেন এবং কম্বোডিয়া, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামের সঙ্গে আলাদা বাণিজ্য চুক্তি ও কাঠামোগত সমঝোতা স্বাক্ষর করেন। এসব চুক্তির মাধ্যমে তিনি ওই চার দেশের জন্য ‘পারস্পরিক শুল্ক হার’ ১৯ থেকে ২০ শতাংশে চূড়ান্ত করেন।
সপ্তাহের শেষে দক্ষিণ কোরিয়ায় চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে ট্রাম্পের বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। সেখানে শুল্ক ও বাণিজ্য বাধা প্রধান আলোচ্য বিষয় হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সম্প্রতি ট্রাম্প চীনা পণ্যের ওপর ১ নভেম্বরের মধ্যে ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছিলেন, যা এখন দুই দেশের নতুন কাঠামোগত চুক্তির কারণে কিছুটা প্রশমিত হয়েছে বলে জানিয়েছে রয়টার্স।
চীনের অর্থনৈতিক অবস্থান ধরে রাখতে ও আসিয়ানের সঙ্গে আঞ্চলিক প্রভাব বজায় রাখতে এই চুক্তি ‘অর্থনৈতিক ভারসাম্যের নতুন দিগন্ত’ খুলে দেবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2025, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available