পটুয়াখালী প্রতিনিধি: পটুয়াখালী জেলা জুড়ে স্বাস্থ্যসেবার নামে চলছে অনিয়মের মহোৎসব। বেসরকারি ক্লিনিক, হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। কিন্তু সরকারি অনুমোদন বা লাইসেন্স নবায়ন ছাড়াই অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। ফলে জেলার লাখো মানুষ প্রতিদিন পড়ছে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে। নিয়মিত পর্যাপ্ত সরকারি তদারকি না থাকায় এবং প্রভাবশালী মালিকদের ছত্রছায়ায় এসব অবৈধ প্রতিষ্ঠান দিন দিন আরও বেপরোয়া হয়ে উঠছে।
সরকারি ডাক্তাররা সরকারি হাসপাতালে সেবা না দিয়ে তারা ব্যস্ত থাকে ক্লিনিক নিয়ে। রোগীরা সরকারি হাসপাতালে সেবা নিতে গেলে তাদেরকে পাঠানো হয় নিজস্ব ক্লিনিকে। সিজার অথবা যে কোনো অপারেশনে নেওয়া হয় অতিরিক্ত টাকা।


অধিকাংশ বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর মালিক জেলায় কর্মরত সরকারি ডাক্তার ও জেলা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মরত কর্মকর্তাগণ। এসব ডাক্তার ও কর্মকর্তাদের রয়েছে একাধিক ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিকের মালিকানা। রয়েছে বিলাসবহুল একাধিক অ্যাপার্টমেন্ট ও ভবনসহ নামে বেনামে অঢেল সম্পত্তি।

জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, পটুয়াখালী জেলায় বর্তমানে ২৪০টি বেসরকারি ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক ও হাসপাতাল রয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ৮১টির লাইসেন্স বৈধ। বাকি ১৫৯টি প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স মেয়াদোত্তীর্ণ বা অনুমোদনই নেই।
জেলার বিভিন্ন ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার ঘুরে দেখা যায়, পটুয়াখালী পৌর শহরের বাস স্ট্যান্ড এলাকায় অবস্থিত পটুয়াখালী ইসলামী চক্ষু হাসপাতাল নামের একটি প্রতিষ্ঠানের কোনো অনুমোদনই নেই। তবুও প্রতিষ্ঠানটি তিন বছর ধরে চোখের সার্জারি করছে। প্রতি মাসে ৩০ থেকে ৫০ জন রোগী অপারেশন করা হয় বলে স্বীকার করে কর্তৃপক্ষ।
এছাড়া পৌর শহরের বাধঘাট এলাকায় অবস্থিত পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার নামের একটি প্রতিষ্ঠানে এমবিবিএস চিকিৎসক না থাকলেও ডিপ্লোমা ডিগ্রিধারী একজন নারী রোগীদের চিকিৎসা দিচ্ছেন। তিনি একাই রোগীদের বিভিন্ন পরীক্ষাসহ প্রেসক্রিপশন দিচ্ছেন। প্রেসক্রিপশনে অ্যান্টিবায়োটিক ঔষধ লেখার কথা স্বীকার করেন তিনি। এছাড়া সেখানে স্থায়ীভাবে কোনো ল্যাব টেকনিশিয়ান ও টেকনোলজিস্টও পাওয়া যায়নি।
প্রতিষ্ঠানের মালিক মো. সুমন বলেন, ‘আমরা বহু বছর ধরে এখানে ব্যবসা করছি। ছোট প্রতিষ্ঠান তাই সব সময় স্টাফদের দরকার হয় না। আমার এক আত্মীয় এমবিবিএস পাশ করেছে তাকে শীঘ্রই এখানে বসাবো।’
গলাচিপা হাসপাতাল রোডে অবস্থিত নিউ লাইফ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে গিয়ে দেখা যায়, ভবনের সামনেই একটি নর্দমা যুক্ত পুকুর রয়েছে যা সব সময় দুর্গন্ধ ছড়ায়। এছাড়া এটির মেয়াদও শেষ হয়েছে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে।
রোগী হামিদা বেগম বলেন, আমি পৌর শহরের বাধঘাট এলাকায় পপুলার ডায়াগনস্টিকে রক্তের পরীক্ষা করাই। রিপোর্ট ভুল আসায় পরে ঢাকায় গেলে ডাক্তার বলেন রিপোর্টই ভুয়া। এতে আমি ব্যাপক হয়রানির শিকার হয়েছি।
গলাচিপা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. মেজবাহ উদ্দিন বলেন, ‘বেসরকারি ক্লিনিক ডায়াগনস্টিক ও হাসপাতাল গুলো সংক্রান্ত সমস্ত ব্যাপার আমাদের সিভিল সার্জন নিজে নিয়ন্ত্রণ করেন। এরপরও আমার উপজেলায় যদি কোনো অনিয়ম ধরা পড়ে সেক্ষেত্রে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে। ডায়াগনস্টিক সেন্টারে শরীরের রক্ত পরিবর্তন ও ১০ সয্যা বেডের অনুমোদনে তার অধিক রোগী ভর্তি এসব আইনের ব্যত্যয়। অবশ্যই তাদের ব্যাপারে খতিয়ে দেখব।’
পটুয়াখালী সিভিল সার্জন ডা. খালিদুর রহমান মিয়া বলেন, ‘আমরা ফাইনাল লিস্ট এখনো করছি সব জায়গা থেকে। ৪টা উপজেলা হয়ে গেছে বাকিগুলো হয়ে যাবে যে কোনো সময়। বর্তমানে বাচ্চাদের ভ্যাকসিন কার্যক্রম চলছে এজন্য কাজটি দেরি হচ্ছে। আমার সাথে ডিসি স্যারের কথা হয়েছে, বাকি উপজেলাগুলো শেষ করেই অভিযানে বের হবো।’
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2025, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available