রাষ্ট্রীয় ফ্যাসিবাদ চলে গেলেও সামাজিক জায়গায় ফ্যাসিবাদ রয়ে গেছে : তথ্য উপদেষ্টা
নিজস্ব প্রতিবেদক : তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বলেছেন, রাষ্ট্রীয় ফ্যাসিবাদ চলে গেলেও সামাজিক জায়গায় ফ্যাসিবাদ রয়ে গেছে। দেশে ইসলামের যতগুলো ধারা আছে, সব কটি ধারার মধ্যে সংলাপ এবং সংযোগের সুযোগ তৈরি না হলে রাষ্ট্র খুবই শঙ্কার মধ্য দিয়ে এগোবে।২৫ অক্টোবর শনিবার সকালে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় বিএমএ ভবনে ‘মাজার সংস্কৃতি: সহিংসতা, সংকট ও ভবিষ্যৎ ভাবনা’ শীর্ষক জাতীয় সংলাপে তিনি এ কথা বলেন। সংলাপের আয়োজন করে সুফি সম্প্রদায় নিয়ে গবেষণা করা প্ল্যাটফর্ম ‘মাকাম’।তিনি বলেন, দেশে ৯০ থেকে ৯২ শতাংশ মুসলমানের মধ্যে বিভিন্ন তরিকা আছে। তাদের মধ্যে কীভাবে সমন্বয় করা যায়, আজ পর্যন্ত রাজনৈতিক নেতারা এটা নিয়ে ভাবেননি, বরং কেউ কওমিদের সঙ্গে, কেউ সুন্নিদের সঙ্গে এভাবে ভাগ করে নিয়েছেন। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে রাজনীতির হাতিয়ার করে নিয়েছেন। জাতীয় নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক দলগুলো সংঘাতের জন্য মুখিয়ে রয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার অবস্থানের কারণে এখন পর্যন্ত তারা সংঘাতে জড়াচ্ছে না বলেও মনে করেন তিনি।মাহফুজ আলম বলেন, সবাই সংঘাতের জন্য মুখিয়ে আছে এবং আপনারা অবশ্যই এটা অল্প কয়েক মাসের মধ্যে দেখতে পাবেন এবং আমি আশঙ্কা করছি, যদি এটার সঙ্গে ধর্মীয় যে দৃষ্টিকোণ, এটা যদি যুক্ত হয়, তাহলে বাংলাদেশের পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে।মাহফুজ বলেন, আওয়ামী লীগ ‘দরবারগুলোর’ সঙ্গে সংযোগ তৈরি করার চেষ্টা করছে বলে তিনি শুনতে পেয়েছেন। দরবারগুলোকে এটা বোঝানোর জন্য যে প্রফেসর ড. ইউনূসের সরকার এসে মাজার ভেঙে দিচ্ছে, মসজিদ থেকে বের করে দিচ্ছে।তিনি বলেন, এই কোশ্চেনটা (প্রশ্ন) অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ইস্যু নয়। এটা ৫০ বছর ধরে চলছে। যখন সরকার পরিবর্তন হয়, মসজিদ কমিটি বদল হয়ে যায়। ইসলামী ফাউন্ডেশনের গভর্নিং কমিটি বদল হয়ে যায়।মাহফুজ আলম বলেন, গত ১৫ বছরে একটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আদর্শিক বিরোধিতার জায়গা থেকে সুফি ঘরানাদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের একটি সংযোগ ঘটেছিল। আওয়ামী লীগ তাদের সুরক্ষা দেবে এবং তারা আওয়ামী লীগকে ভোট দেবে। এই পরিমণ্ডলেই ধর্মীয় রাজনীতিটা আটকে গেছে। কওমিরাও এর বাইরে নয় বলেও মনে করেন তিনি।তারাও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মাধ্যমে ব্যবহৃত হয়েছে। দেশে বিভিন্ন মুসলিম রাষ্ট্রের দূতাবাসগুলোর সংযোগ রয়েছে উল্লেখ করে মাহফুজ আলম বলেন, কোনো কোনো এম্বাসি চায় যে মাজারগুলো ধ্বংস হোক। একধরনের রাজনৈতিক আদর্শিক জায়গাগুলো এখানে আছে। ধর্মীয় জনগোষ্ঠী লড়াই করবে, মব করবে এমন ভয় না পেয়ে, এই সংকটগুলো রাষ্ট্রীয় জায়গা থেকে, রাজনৈতিক জায়গা থেকে, নীতির জায়গা থেকে দেখতে হবে। না হলে সংকট ঘনীভূত হতে থাকবে।তথ্য উপদেষ্টা বলেন, একটি ক্ষোভের জায়গা আছে যে এক বছরে কিছুই করা হয়নি। এই ক্ষোভ থেকে পাল্টা আঘাতের চিন্তা করলে ভালো কিছু হবে না।তিনি বলেন, মাজারে হামলার পর অনেক লোককে গ্রেফতার করা হয়েছে। এখন সমীক্ষা করে মাজারগুলোকে সংস্কারের ব্যবস্থা করা হবে। হামলার শিকার মাজারগুলোর পরিচালনা কর্তৃপক্ষ কে মামলা করার আহ্বান জানিয়ে তথ্য উপদেষ্টা বলেন, এই কালচার (সংস্কৃতি) যদি টিকে যায়, তাহলে এরপর আরেক দলের ইসলাম আসবে, ওই ইসলাম আরেকটা দলের মসজিদ ভেঙে ফেলবে। আজ সুফিদের ওপর আছে, কাল কওমিদের ওপর হবে। এটা অব্যাহত থাকতে পারে না। বক্তব্যের শেষে তথ্য উপদেষ্টা কবে পদত্যাগ করবেন, এ প্রশ্ন করেন একজন সাংবাদিক। তবে আলোচনার বিষয়বস্তুর সঙ্গে সম্পর্কিত বিষয় না হওয়ায় উপদেষ্টা এ প্রশ্নের উত্তর দেননি।