• ঢাকা
  • |
  • মঙ্গলবার ১৯শে কার্তিক ১৪৩২ রাত ১২:৩১:৪৮ (04-Nov-2025)
  • - ৩৩° সে:
সংবাদ ছবি

ইসরায়েলি অবরোধে ক্ষুধা-শীতে বিপর্যস্ত গাজার ফিলিস্তিনিরা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলেও ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি অবরোধে ফিলিস্তিনিদের দুর্ভোগ কমেনি। ক্ষুধা, ঠান্ডা, চিকিৎসা সংকট আর অব্যাহত হামলার ভয়— সব মিলিয়ে গাজা এখন এক মানবিক বিপর্যয়ের নাম।৩ নভেম্বর সোমবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।সংবাদমাধ্যমটি বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় ঘোষিত যুদ্ধবিরতির পরও গাজায় ইসরায়েলের হামলা থামেনি। ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, এক মাসে অন্তত ২৩৬ ফিলিস্তিনি নিহত ও ৬০০ জনের বেশি আহত হয়েছেন।গত ২৪ ঘণ্টায়ই তিনজনের মৃত্যু ও ধসে পড়া ভবন থেকে আরও তিনজনের মরদেহ উদ্ধারের খবর দিয়েছে গাজার হাসপাতালগুলো। এর মধ্যে একজন আগের হামলায় আহত হয়ে মারা যান।গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার পর থেকে ধসে যাওয়া বাড়িঘরের ধ্বংসস্তূপ থেকে আরও ৫০০ ফিলিস্তিনির মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। তারা সবাই ইসরায়েলের দুই বছরের টানা বোমাবর্ষণ ও ধ্বংসযজ্ঞের শিকার।রোববার সন্ধ্যায় ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর জানায়, রেডক্রসের মাধ্যমে তিনজন ইসরায়েলি বন্দির মরদেহ ফেরত আনা হয়েছে। যুদ্ধবিরতির শর্ত অনুযায়ী, প্রতিটি ইসরায়েলি বন্দির মরদেহের বিনিময়ে ইসরায়েলকে ১৫ জন করে মৃত ফিলিস্তিনি বন্দির মরদেহ ফেরত দিতে হবে।মার্কিন সামরিক বাহিনীর সেন্ট্রাল কমান্ড (সেন্টকম) সম্প্রতি অভিযোগ করে, হামাস দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসে একটি ত্রাণবাহী ট্রাক লুট করেছে। তবে তারা কোনো প্রমাণ দেয়নি। একটি ড্রোন ফুটেজের বরাত দিয়ে দাবি করা হয়, ‘হামাস সদস্যরা’ মানবিক সহায়তা দখল করে নিয়েছে।গাজার সরকারি গণমাধ্যম কার্যালয় এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে জানিয়েছে, এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও সাজানো অভিযোগ। এটি ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকে কলঙ্কিত করার জন্য চালানো পরিকল্পিত প্রচারণা। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, “ইসরায়েল ইচ্ছাকৃতভাবে সহায়তা সরবরাহে বাধা দিচ্ছে, যাতে ক্ষুধা তৈরি করে গাজায় মানবিক বিপর্যয় ঘটানো যায়।”এদিকে ইসরায়েলি অবরোধে গাজার হাসপাতালগুলো ভীষণ সংকটে পড়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) হিসাব অনুযায়ী, বিশেষায়িত চিকিৎসার প্রয়োজন এমন ১৬ হাজার ৫০০ জনেরও বেশি রোগী এখনো গাজায় আটকা রয়েছেন।জাতিসংঘের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়, সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রায় ৪ হাজার আহত ফিলিস্তিনিকে চিকিৎসার জন্য গ্রহণ করেছে মিসর। সংযুক্ত আরব আমিরাত নিয়েছে ১ হাজার ৪৫০ জন, কাতার ৯৭০ জন ও তুরস্ক ৪৩৭ জন। ইউরোপে সবচেয়ে বেশি চিকিৎসা দিয়েছে ইতালি— ২০১ জনকে। তবে এখনো ৩ হাজার ৮০০ শিশুসহ হাজারো মানুষ বিদেশে চিকিৎসার অপেক্ষায় আছেন।এছাড়া শীত ঘনিয়ে আসায় গাজার বাস্তুচ্যুত মানুষরা টিকে থাকার শেষ চেষ্টা করছেন। ইসরায়েলের নির্মাণসামগ্রী প্রবেশে নিষেধাজ্ঞার কারণে অনেকেই কাদামাটির ঘর বানিয়ে আশ্রয় নিচ্ছেন।গাজা সিটির বাসিন্দা ৪২ বছর বয়সী খালেদ আল-দাহদুহ আল জাজিরাকে বলেন, “শীত আসছে, তাই কিছুটা আশ্রয় তৈরি করার চেষ্টা করেছি। তাঁবু নেই, সিমেন্ট নেই— তাই ধ্বংসস্তূপের ইট আর কাদা দিয়ে অস্থায়ী ঘর বানিয়েছি। অন্তত ঠান্ডা, পোকা আর বৃষ্টি থেকে কিছুটা রক্ষা পাওয়া যায়।”তার আত্মীয় সাইফ আল-বায়েকও একইভাবে চেষ্টা করলেও উপকরণ না থাকায় ঘর সম্পূর্ণ করতে পারেননি। তিনি বলেন, “পুরো এলাকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। যতটুকু পাথর পেয়েছি তা দিয়েই কাদার দেয়াল তুলেছি। কিন্তু ছাদ অসমান, ফাঁকফোকর দিয়ে পানি ঢোকে।”জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) গাজা প্রতিনিধি আলেসান্দ্রো ম্রাকিচ বলেন, “নির্মাণসামগ্রীর অভাবে মানুষকে প্রাচীন পদ্ধতিতে আশ্রয় গড়তে হচ্ছে। এটি তাদের বেঁচে থাকার একমাত্র উপায়।”সহায়তা সংস্থাগুলো সতর্ক করেছে, তাপমাত্রা কমতে থাকলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে। যুদ্ধবিরতি কার্যকর থাকলেও ক্ষুধা, ঠান্ডা আর অনিশ্চয়তায় গাজার মানুষ এখনো মৃত্যুভয়ে দিন কাটাচ্ছেন।